একজন বাবা ও একটি কাকের গল্প


এক ব্যক্তি তাঁর ছেলেকে নিয়ে একটি পার্কে হাঁটছিলেন , তাঁরা এক সাথে হাঁটছিল । ছেলেটি গাছের উপর একটা কাক দেখে বললো- বাবা !এটা কি? এটা কি?বাচ্চার বয়স ছিল দুবছর। বাবা বললো এটা একটা কাক। ছেলে আবার বললো- বাবা! এটা কি??বাবা আবারও উত্তর দিলো এটা একটা কাক।আচ্ছা ঠিক আছে, বাবা! এটা কি?বাবা বললো এটা একটা কাক। ওহহ কাক??এটা কি? বাবা আবারও উত্তর দিলো এটা একটা কাক।এভাবে ১০ মিনিট ছেলেটি বাবাকে প্রশ্ন করে গেলো,আর বাবা ৩০ বার উত্তর দিলেন।তিনি একটা ছোট ডায়রিতে লিখে রাখলেন , আমার ছেলে আজকে পার্কে হাঁঁটার সময় একটা কাককে নিয়ে ৩০ বার প্রশ্ন করেছিলো,যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস।


৩০ বছর পর…।ছেলের বয়স এখন দুবছর না তাঁর বয়স এখন ৩২ বছর।বাবা ছেলেকে ফোন করলো, আমি কি তোমার কাছে আসতে পারি? ছেলে উত্তর দিলো ,বাবা! এটা ঠিক দেখা করার সময় না। বাবা বললেন , না আমাকে কিছুক্ষণ সময় দাও,আমার হয়তো ১০-১৫ মিনিট সময় দরকার , শুধু এইটুকু সময় হলে চলবে।চলো গাড়িতে করে বের হই, তোমার সাথে কিছু ব্যাপারে কথা আছ।ছেলে বেশ বিরক্ত হয়ে - আহহ! ঠিক আছে। বাবা আসলেন এবং গাড়িতে উঠে ছেলেকে নিয়ে পার্কে গেলেন। ছেলে মহা বিরক্ত হয়ে বললো , এসব কি বাবা? আপনি কি খুব দ্রুত বলতে পারবেন?আমার কাজ আছে,বাবা বললেন- শুধু আমার সাথে হাঁটো ।তাঁরা হাঁটছিল এবং গাছের উপর একটি কাক দেখতে ফেলো।বাবা বললেন - বৎস!এটা কি? তুমি কি সত্যি জানতে চাও এটা কি?এটা একটা কাক! ওহহ,  বৎস! এটা কি?ছেলে এবার প্রচণ্ড রেগে গেলো , এটা কি একটা খেলা?আমার কাজ আছে ঠিক আছে? এটা একটা কাক আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না?আমি গতমাসেও আপানাকে নতুন চশমা এনে দিয়েছি , আমার সাথে এমন কেন হচ্ছে? বাবা! আপনি কেন এতো জটিল আমি বুঝতে পারছি না সমস্যাটা কোথায় ?শুধু বলেন আপনি কি বলতে চান, আমি ব্যস্ত আছি ঠিক আছে? বাবা তাঁর ডায়রির পাতা খুলে বললো বৎস! ঠিক এরকম একটা ঘটনা ৩০ বছর আগে ঘটেছিলো, আমরা এই পার্কে হাঁটছিলাম, তুমি একটা কাক দেখেছিলে,তুমি ৩০ বার এটার সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে , আমি প্রতিবার হেসে উত্তর দিয়েছিলাম আর এখন তুমি দ্বিতীয় বারও উত্তর দিতে পারছো না।


আমরা আমাদের পিতা-মাতাকে কি দিচ্ছি? মূল বিষয় হলো আল্লাহ প্রথমে নিজের কথা উল্লেখ করেছেন তারপর পিতা-মাতার কথা উল্লেখ করেছেন। তোমরা নিজেরাই চিন্তা করো? তাঁরা তোমাদের জন্য কি করেছেন আর তোমরা তাদের জন্য কি করছো?এমন অনেক পিতা-মাতা আছেন যখন তাদের সন্তান আইসিইউ তে থাকে তাঁরা ছোট্ট গ্লাসবক্সটার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকেন, যার ভিতরে শিশুটি  আছে,দিনরাত ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে শুধু দাড়িয়েই থাকেন, কখনো বসেন না।শুধু দাড়িয়ে থাকেন ,মেশিনের মাধ্যমে খাবার  দিয়ে তাদের জীবন চলছে।আর ঠিক এই সন্তানই বড় হলে ফোন করে খবর নেওয়ারও সময় হয় না।কত মা তাঁর সন্তান ভুমিষ্ট করতে গিয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যায়। আর এখন তাঁর ফোনের উত্তর দেয়াও অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে? আর এখন তাকে কি দিচ্ছেন? সারাদিন দুই মিনিটের মতো সময়? আর কি কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে দিন। এটা কতোটা অন্যায্য যে আপনি তাদের নিকট ছিলেন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ , আর এখন তাঁরা আপনার কাছে গুরুত্বহীন। 


এটা কতোটা ন্যায়বিরুদ্ধ?তাঁরা এই যন্ত্রণা প্রতিদিন বয়ে বেড়ায় যে আমি আমার সন্তানের কাছে কিছুই না, আমি তাদের কাছে কিছুই না । আমি তাদের কাছে মূল্যহীন ,আমার জন্য তাদের হাতে কোন সময় নেই। কোন কিছু আপনার কাছে মূল্যবান মনে হলে আপনি তাতে সময়দান করেন, বেশীরভাগ সময় আমরা এই সময়টায় পিতা-মাতার থেকে দূরে সরে থাকতে চাই , আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে থাকতে চান।নিজের মতো করে থাকতে চান, মাতা-পিতার সাথে থাকতে চান না।এই বদঅভ্যাসটা আপনি বাড়তে দিয়েছেন।আর সময়ে সময়ে এটা আরো খারাপ হতে থাকবে। আমাদের পিতা-মাতা অনেক বেশী আবেগপ্রবণ , তাঁরা খুবই রক্ষণাত্মক। এটা বুঝতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি নিজেই পিতা-মাতা হবেন। আপনার বয়স ৬০ হলেও আপনি তাদের কাছে শিশু ।তাঁরা এখনো সরণ করতে পারে আপনার ময়লা নেপকেন পরিস্কার করার কথা, আপনাকে দুধ খাওয়ানোর কথা। কীভাবে ডেকুর তুলেছেন। পিছনের সিটে বসা অবস্থায় কীভাবে আপনাকে পরিস্কার করিয়েছে, খাইয়েছে।আপনি সরণ করতে পারেন না কিন্তু তাঁরা পারে। আমার সন্তান এটি মনে রাখবে না , গাড়িতে বসা অবস্থায় , আব্বু! টয়লেটে যাবো! টয়লেটে যাবো! তারপর সে বলা শুরু করলো আমি ঈদে কোন খেলনা পাবো?তারপর যখন একদিন সে গ্রাডুয়েশন কমপ্লিট করেছে , একদিন বিয়ে করেছে, সে তখন আর এটা মনে রাখবে না।কিন্তু কে কখনো ভুলে যাবে না?আমি কখনো ভুলে যাবো না , আমি ভুলবো না তাকে কীভাবে বাথরুমে নিয়েছি,তাকে পরিস্কার করিয়েছি , জামা পরিয়েছি, সে বলেছিলো - আব্বা! এই স্পাইডার-ম্যান পোশাকটা পরিয়ে দিন। আমার সন্তান এগুলা কিছুই মনে রাখবে না। আমি রাখবো, আমি মনে রাখবো।এই একি সন্তান যখন একদিন পিতাকে বলে - বাবা! আমি ঠিক তোমাকে বুঝতে পারি না।আমার হাতে একদম সময় নেই। এটা আসলেই তাকে দুঃখ দেয়। আর ঠিক এই আচরণটাই আমি-আপনি আমাদের পিতা-মাতার সাথে করে থাকি।তারা ছিলো আমাদের জীবন , আমার জন্য তাঁরা তাদের জীবন দিয়েছেন, তাদের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন,তাদের ছুটি , বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন।আপনি জানেন সেটা? আমি এটা এখন জানি, আমি এটা আগে জানতাম না , আপনি আসার আগ পর্যন্ত তাদের জীবনের এক রকমের পরিকল্পনা করা ছিলো আর আপনি আসার পর আপনি হয়েছেন তাদের পরিকল্পনা । আপনি তাদের সব কিছু , এখন একটা জিনিস আপনার মন মতো না হলে আপনি রাগান্বিত হয়ে পড়েন, কিছুই শুনতে চান না , তাদের সাথে রেগে কথা বলেন। আমরা এই মুহূর্তে ইসলাম নিয়ে আলোচনা করছি না। আমরা শালীনতার কথা বলছি। তাঁরা আপনার জন্য কি করেছেন আর আপনি তাদের কি ফিরিয়ে দিচ্ছেন।এটা খুবই অন্যায় ,এটা খুবই অসমাচিন। আমার বাবা এতো বিরক্তি কর , আমার মা এতো রাগী ,তাঁরা সব সময় রাগী তাঁরা এই, তাঁরা সেই।কিন্তু আপনি কি? আপনার অবস্থা কি? আপনি যদি আপনার বাবা-মায়ের দোয়া না পান তাহলে আপনার জীবনের কোন কিছুই ঠিক হবে না , যদি আপনার কাছ থেকে তাঁরা সুখী না হয় । আর তাদের সুখী করার জন্য আপনাকে সব করতে হবে।


-উস্তাদ নোমান আলী খান।

Comments

Post a Comment